পার্ডিডো স্ট্রীট স্টেশন / চায়না মেভিল
Perdido Street Station / China Miéville
আর্থার সি ক্লার্ক পুরষ্কার এবং ব্রিটিশ ফ্যান্টাসি পুরষ্কারে ভূষিত ২০০০ সালে প্রকাশিত এই বইটিকে বেশ কয়েকটি কারণে স্টিমপাঙ্ক ঘরাণার অন্য
তম মাইলফলক বলা যায় । এই বইটিতে মেভিল বেশ কয়েকটি নতুন জিনিষ নিয়ে আসেন যা পরবর্তীকালে স্টিমপাঙ্কের ধারাটিকে আরো পুষ্ট করে । প্রথমতঃ মেভিল গল্পের পটভূমিকাকে পরিচিত ভূগোলের বাইরে সরিয়ে নিয়ে গেছেন এক কল্পিত শহরে। দ্বিতীয়তঃ তাঁর এই কল্পিত জগতে মানুষের পাশে রেখেছেন আরো নানান সব অদ্ভূত প্রজাতিকে, গরুড়, ক্যাকটাস মানব, উভচর ভডিয়ানয়, আর খেপরি, যাদের স্ত্রীজাতির শরীর মানুষের মতো হলেও মাথা স্ক্যারাব পোকার মতো । তৃতীয়তঃ এই কাহিনীতে মেভিল ম্যাজিককে আলতো করে ছুঁয়ে যাননি, থমাটার্জী (thaumaturgy) নাম দিয়ে তাকে একটা বিজ্ঞানের ডিসিপ্লিন মতো করে দাঁড় করিয়েছেন । চতুর্থ, সমাজের ওপরের তলাটাকে এড়িয়ে গিয়ে তিনি কাহিনীর চরিত্রদের টেনে এনেছেন সমাজের বাহির কিনারা থেকে, এলিটদের স্বাভাবিক জীবনের পালিশ বাদ দিয়ে তুলে ধরেছেন যান্ত্রিক সমাজের কুৎসিৎ দিকগুলো ।
কাহিনীর পটভূমিকা নিউ ক্রবুজন নামে এক শহর । দুই নদীর সঙ্গমস্থলে গড়ে ওঠা এই শহর খুব একটা খুশীর জায়গা নয় । এর বর্ণনা দিতে গিয়ে মেভিল একে বলেছেন ‘a conspiracy of industry and violence’ । এই শহরের মাথায় অত্যাচারী সরকার, আর তলায় অরগানাইজড ক্রাইমের জুলুম । তার মধ্যেই বাঁচে মানুষ আর তার পাশাপাশি অন্যান্য প্রজাতিরা । আর চলে তাদের টিকে থাকার লড়াই । এই শহরে রাতে দেখতে পাওয়া যায় ‘sleeping beggars that clutch each other and congeal for warmth like lower creatures, forced back down evolutionary strata by their poverty.’
কাহিনীর মূল চরিত্র আইজ্যাক একজন বৈজ্ঞানিক । তবে বৈজ্ঞানিক হলেও সে ভার্ণ বা ওয়েলেসের কাহিনীর মূলধারার বৈজ্ঞানিক নয়, সমাজের বাহির সীমানায় কাজ করা একজন ‘outcast scientist, the disreputable thinker who walked out of a lucrative teaching post’ । তার সঙ্গিনী লিন একজন খেপরি, তার শরীরটা নারীর হলেও মাথার জায়গায় বসানো একটা স্ক্যারাব বিটল।
আইজ্যাকের ল্যাবরেটরিতে এসে হাজির হয় একজন গরুড় । কোন কারণে সে তার ডানা হারিয়েছে । আইজ্যাককে নিযুক্ত করে সে তার নতুন ডানা বানিয়ে দিতে । এই কাজ করতে গিয়ে আইজ্যাককে নানা উড়ন্ত প্রাণী নিয়ে পরীক্ষানিরিক্ষা করতে হয় , এবং তার ভুলে নিউ ক্রবুজনের আকাশে ছাড়া পেয়ে যায় মানুষ শিকারী এক বিপজ্জনক প্রাণী । শুরু হয় নানা টানাপোড়েন, যার একদিকে সরকার আর তার অতি গোপন অভিসন্ধি, আর অন্যদিকে অর্গানাইজড ক্রাইমের মাফিয়া।
নিউ ক্রবুজনের বিচিত্র পটভূমিকাকে আশ্রয় করে মেভিল গড়ে তুলেছেন প্রাপতমনস্কদের জন্যে এক জটিল কাহিনী। ছুঁয়ে গেছেন দারিদ্র, জিনোফোবিয়া, অপরাধ আর সরকারের গোপন আঁতাত এবং দূষণ । স্টিমপাঙ্ক অনুরাগীদের কাছে এই বইটা খুলে দেবে নতুন দিগন্ত ।
Comments