#কল্পবিজ্ঞান_সাহিত্য The Handmaids Tale / Margaret Atwod
এই উপন্যাসটি মার্গারেট অ্যাটউড লিখতে শুরু করেন ১৯৮৪ সালে, পূব আর পশ্চিমে দ্বিধাবিভক্ত বার্লিনে বসে । সোভিয়েত সাম্রাজ্যের সূর্য তখনও তার শিখরে, পূর্ব ইউরোপ সে
সাম্রাজ্যের সামন্ত রাজ্য । পূর্ব জার্মানী, চেকশ্লোভাকিয়া ইত্যাদি দেশে মার্গারেট অ্যাটউড নিজের চোখে টোটালিটেরিয়ান স্টেটের নাগরিকদের ওপর সর্বব্যাপী শাসনের যে বজ্রবন্ধন প্রত্যক্ষ করেন, এই উপন্যাসে প্রভাব তার অনেকটাই । উপন্যাসের ভূমিকায় তিনি নিজেই জানাচ্ছেন, ‘During my visits to several countries behind the Iron Curtain - Czechoslovakia, East Germany - I experienced the wariness, the feeling of being spied on, the silences, the changes of subject, the oblique ways in which people might convey information, and these had an influence on what I was writing.’ । এ বইটির বিষয়বস্তু নিয়ে নানান বিতর্ক আছে , এবং বইটির লিখন শৈলীও অনেকের কাছে সুখপাঠ্য নয়। কিন্তু স্পেকুলেটিভ ফিকশনের এটি একটি অন্যতম সৃষ্টি ।
কাহিনীর পটভূমি কোন এক সুদূর ভবিষ্যতের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র । সংবিধান ও গণতন্ত্র দুটিই এই ভবিষ্যতে অপসারিত, তার জায়গা নিয়েছে এক থিওক্র্যাসি, যার নাম রিপাবলিক অফ গিলিয়াড । সমাজকে পুনর্গঠন করা হয়েছে ওল্ড টেস্টামেন্টের থেকে নেওয়া কিছু আদর্শ অনুযায়ী । আমেরিকার গণতন্ত্রের তলায় সপ্তদশ শতাব্দীর যে গোঁড়া পিউরিটান শেকড় সুপ্ত অবস্থায় ছিল, সুযোগ পেয়ে তাই বিস্তৃত হয়ে উঠেছে ডালপালা মেলে ।
সাধারণতঃ উচ্চনিচ শ্রেণিতে বিভক্ত সমাজে যা কিছু অপ্রতুল, মহার্ঘ তা ব্যবহারে লাগে কেবল সমাজের ওপরতলার মানুষদের । এই ভবিষ্যতে যে কোন কারণেই হোক কমে এসেছে মানুষের প্রজনন ক্ষমতা, তাই মাতৃত্বে সক্ষম নারীরা এই সমাজের ওপরতলার মানুষদের ব্যবহার্য্য বস্তু - তাদের বলা হয় হ্যান্ডমেড । উপন্যাসের ভূমিকায় মার্গারেট অ্যাটউড লিখছেন, ‘Under totalitarianisms – or indeed in any sharply hierarchical society – the ruling class monopolizes valuable things, so the elite of the regime arrange to have fertile females assigned to them as Handmaids.’ ।
উত্তম পুরুষে লেখা এই উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র অফফ্রেড নামে এক হ্যাণ্ডমেড, কাহিনীটি তারই জবানবন্দীতে লিখিত । অফফ্রেড নামটিরও একটি ব্যাখা আছে - ইংরিজীতে এটি একটু ভেঙে লিখলে দাঁড়ায় of-fred , বা ফ্রেডে’র । নারীরা এই সমাজে পুরুষের সম্পত্তি বলে গণ্য, এই নামকরণেই তা স্পষ্ট । হ্যান্ডমেড ছাড়াও এই সমাজে নারীদের বিভক্ত করা হয়েছে দায়িত্ব অনুযায়ী আরো নানা পদে । গৃহকর্মে নিযুক্ত নারীরা মার্থা, হ্যান্ডমেডদের ট্রেনারদের নাম আন্ট, সমাজের নিচুতলার কর্মীদের স্ত্রীদের বলা হয় ইকোনোওয়াইফ । আলাদা করে চেনার জন্যে এদের পোষাক ভিন্ন ভিন্ন রঙের । মার্থাদের সবুজ, আন্টদের খয়েরী আর হ্যান্ডমেডদের লাল । স্বৈরতান্ত্রিক সমাজে শ্রেণী বিভাগ বোঝানোর জন্যে আর মানুষকে কন্ট্রোল করার জন্যে পোষাকের রঙের বিকল্প নেই । অ্যাটউডের নিজের ভাষায় - ‘Many totalitarianisms have used clothing, both forbidden and enforced, to identify and control people – think of yellow stars and Roman purple – and many have ruled behind a religious front. It makes the creation of heretics that much easier.’
কাহিনীতে অফফ্রেড কোন এক উচ্চপদস্থ কমান্ডারের ব্যবহার্য সম্পত্তি । তার প্রধান দায়িত্ব কমান্ডারের সন্তান ধারণ । সন্তান ধারণ ক্ষমতাই এ সমাজে তার একমাত্র মূল্য, সুতরাং মাতৃত্ব লাভে অসমর্থ হলে তাকে হয়ত পাঠানো হবে নির্বাসনে । কমাণ্ডারের বাড়ি অফফ্রেডের একরকম বন্দীশালা, দিনে একবারই তার বাড়ির বাইরে সুপারমার্কেটে যাওয়ার অনুমতি আছে । এই বাড়িতেই অফফ্রেড তার দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি লিপিবদ্ধ করে, কখনো তার ফেলে আসা স্বাধীন জীবনের স্মৃতিচারণা করে । সে যেন কাল থেকে কালান্তরে ভেসে আসা এক শরণার্থী, যে পুরনো ফেলে আসা জীবনের খুঁটিনাটিগুলো আর কোন কাজের নয় জেনেও তাদের আঁকড়ে ধরতে থাকে - ‘I’m a refugee from the past, and like other refugees I go over the customs and habits of being I’ve left or been forced to leave behind me, and it all seems just as quaint, from here, and I am just as obsessive about it.’ । অথবা সে যেন একটা শূন্য ঘর, যেখানে একসময়ে অনেক কিছুই হত, কিন্তু এখন আর কিছু হয় না, কেবল জানলার বাইরে থেকে অযত্ন লালিত আগাছার ফুলের পরাগ মাটিতে এসে পড়ে ধুলোর মতো - ‘I am like a room where things once happened and now nothing does, except the pollen of the weeds that grow up outside the window, blowing in as dust across the floor.’
এই অসুস্থ জীবনযাপনে অফফ্রেড অল্প অল্প করে তার মানসিক সুস্থতা জমিয়ে রাখে টাকা জমানোর মত করেই - ‘Sanity is a valuable possession; I hoard it the way people once hoarded money. I save it, so I will have enough, when the time comes.’ ।
কিন্তু এই অন্যায়, অবিচারের মধ্যে মানুষ বেঁচে থাকে কি করে ? ইগ্নোর করে , দেখেও না দেখে , উত্তর দেয় অফফ্রেড । কিন্তু ইগ্নোরেন্স, অজ্ঞতা, আর ইগ্নোর করা দুটো এক জিনিষ নয় । ইগ্নোর করা অভ্যেস করতে হয় - ‘We lived, as usual, by ignoring. Ignoring isn’t the same as ignorance, you have to work at it.’ ।
ধীরে ধীরে অফফ্রেডের কাছে আরো অনেক কিছু পরিস্ফুট হয় , সে জানতে পারে থিওক্র্যাসীর আপাত নিয়মনিষ্ঠ জীবনের নিচে ব্যাভিচারের চোরা স্রোতের কথা, জানতে পারে অঙ্কুরোদ্গম বিদ্রোহের কথা ।
না, এটা ঠিক পাঠককে বিনোদন দেওয়ার মত সুখপাঠ্য কাহিনী নয় । এই অসুস্থ সমাজের অসুস্থতার বিবরণ হয়ত পাঠককে কাহিনীর শেষে কিছুটা তিক্ততা ছাড়া কিছু উপহার দেবে না ।
কিন্তু নিছক আনন্দ দেওয়ার জন্যে অফফ্রেড এই কাহিনীর অবতারণা করেনি । তাই গল্পের শেষে সেই নিজেই আক্ষেপ করে বলে, এই গল্পটা আর একটু অন্যরকম, আর একটু সভ্য হলে হয়ত ভালো হত - ‘I WISH THIS story were different. I wish it were more civilized.’ ।
কল্পবিজ্ঞানের অন্যতম দায়িত্ব হল একটা দর্পণের মুখোমুখি পাঠককে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করা, ‘হোয়াট ইফ ? ‘ । মার্গারেট অ্যাটউডের হ্যান্ডসমেড টেল উপন্যাসও তেমনি এক ‘হোয়াট ইফ ?’ ।
Comments